আজকে “পাখি থ্রি-পিস” কিনে না দেওয়ায় স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিউজটা নিয়া খুব আলোচনা সমালোচনা হইতেছে। আমিই কিছু কইতে চাই, তবে “পাখি থ্রি-পিস” আর “ডিভোর্স” বিষয়ে না। এইগুলা পার্সনাল মেটার পার্সনলাই থাক।
সমস্যা যেটা, এইযে “পশু-পাখি থ্রি-পিস” এইসবের উত্থান কোথা থেকে এইটা নিয়া ? অনেকেই এজন্য ভারতীয় চ্যানেলের অবাধ সম্প্রচারকে দ্বায়ি করতেছেন। বিশেষ করে জি-বাংলা, স্টার জলসা আরও কতো কী..। আমি এই বিষয়টা নিয়াই কথা বলতে চাই।
অনেকেই দেখা যায় ভারতীয় এইসব চ্যানেলের প্রতি খুব বিরক্ত, অনেকে আবার বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন এইসব চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। আসলে কী সমস্যা ভারতীয় চ্যানেলে ?? মানুষ কেনো দেশী চ্যানেল রেখে ঐসব চ্যানেল দেখতে যায়, দেশীয় চ্যানেল গুলাতে কি নাটক বা ভাল প্রোগ্রাম হয় না?? হুম হয়, তাহলে ??
আসলে কি করবো মানুষ আর, বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো খুললে এড ছাড়া আর কিছু কি দেখা যায় এর মধ্যে কোনো অনুষ্ঠানের নাই টাইম-টেবল, ৮টায় বললে ১০টায়ও আরম্ভ হয় না।
তাই বধ্য হয়েই মানুষ জি-বাংলা আর স্টার জলসা বা অন্য ভারতীয় চ্যানেলগুলে ঘুরে যায়।
ভারতীয় চ্যানেল গুলোর দুইটা খুব লক্ষনিয় বৈশিষ্ট তা হলো যে,
১) সময়ানূবর্তীতা। যেই অনুষ্ঠান ৮ টায় শুরু হওয়া কথা, তা ঠিক ৮টাতেই হবে ১ সেকেন্ড লেট হয় না, প্রয়োজনে এড-এর মাঝ খানে কেটে দিয়ে হলেও অনুষ্ঠান শুরু করে দেয়ে।
২) নির্দিষ্ট বৈশিষ্টমূলক চ্যানেল। নাটকের চ্যানেল গুলোতো শুধু নাটকই দেখানো হয়, ঘন্টায় ঘন্টায় নিউজ আর টোকশো নাই। এবং ধারবাহিক ভাবে একটা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই অন্যটা আরম্ভ করে দেয়ে তাই দর্শক সুইচ হয়ে যাওয়ার কোনো অপশন থাকে না।
কিন্তু বাংলাদেশি চ্যানেল গুলো সব মাল্টি প্রোগ্রাম টাইপ চ্যানেল, ঘন্টায় ঘন্টায় সংবাদ, এড’স, মিউজিক…. । কোন চ্যানেল কিসের জন্য বিশিষ্ট তা বুঝা যায় না সব এক। কখন কোন চ্যানেলে কি শুরু হতে পারে অনেকেই এইগুলার খোজ রাখে, রাখা সম্ভবও না। হজবরল ভাবে অনুষ্টানের সিডিউল সাজানো হলে কে এসব খোজ নিতে যাবে। তাই বাংলাদেশি চ্যানেলগুলা দেখতে বসলে রিমোট হাতে নিয়ে, “এই চ্যানেল টু সেই চ্যানেল” করা ছাড়া উপায় থাকে না। তার পরেও পছন্দের প্রোগ্রাম খোজে না পেয়ে ভারতীয় চ্যানেলে ঢু মারতে হয়।
আর এই ভারতীয় চ্যানেলে ঢু মারার কুফল ইতিমধ্যে সমাজে শুরু হয়ে গেছে। ” অমুকগঞ্জে রাশি” দেখতে বাধা দেওয়া কিশোরির আত্নহত্যা “, “তমুকগঞ্জে স্টার জলসা দেখতে না দেওয়া স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা” আজে আবার ” পাখি থ্রিপিস কিনে না দেওয়া স্বামীকে তালাক”।
এখন এসব দেখে অনেকে দ্বাবী তুলছে সরকার যেনো ভারতীয় চ্যানেল গুলো বন্ধ করে দেয়ে। কিন্তু মূল সমস্যা যে এটা না তা তো উপরে ব্যাখ্যা করলাম।
আরেকটা বিষয়, অনেকেই অনেক সময় সব কিছু না দেখে না বুঝেই ধারনা করে বলতে দেখি , বাংলাদেশের প্রোগ্রাম বা নাটক গুলার মান ভারতীয় চ্যানেল থেকে হয়তো খারপ। তাই দর্শক সুইচ করতে বাধ্য হয়। এটা মোটেই যুক্তিযুক্ত কথা না। বাংলাদেশে অনেক ভাল ভাল নাটক কিংবা প্রোগ্রাম হচ্ছে। বিটিভি স্বর্ণযুগের কথা বদা দিলেও। ডিশ চ্যানেলের যুগেও ভাল ভাল নাটক হয়েছে হচ্ছে.. হাউজফুল, এসএনএস, রেড সিগনাল, রেডিও চকলেট, ৪২০, নুরুল হুদার সিরিজ গুলো ইত্যাদি (সব মনে পরতেছেনা এখন)। এখনও ঐসব নাটাক পুলাপাইন ইউটিউব থেকে নামাইয়া দেখে। তো ভাল প্রোগ্রাম হয় না এইটা যুক্তি যুক্ত কথা না। কিন্তু প্রোগ্রাম যখন এয়ার হয় তখন অনেকেই সেটা সময় মতো দেখতে পারে না, কারন ঐযে বললাম ৮টা প্রগাম ১০টায়ও শুরু হয় না শুদু এডই চলতে থাকে। তো মানুষ একটা ধারাবিহক নাটক দেখতে কতক্ষন অপেক্ষ করবো??? তাই সুইচ করে অন্য চ্যানেলে। আর এইসব প্রোগ্রামগুলেই পরে তারা ইউটিব থেকে ডাউনলোড করে বা সিডি কিনে দেখে। তবে হ্যা, বাংলাদেশের এই সময়ের বেশিরভাগ দর্শকপ্রিয়ে নাটক গুলাই হাস্যরষাত্বক মূলক যা তরুন প্রজন্মের কাছে হয়তো খুব জনপ্রিয়। সিরিয়াস বা সাংসারিক জীবন নিয়ে নাটক খুব কম তৈরি হয়,যা আবার মহিলারা খুব পছন্দ করে। এই বিষয়গুলা নাট্যনির্মাতারা ভেবে দেখতে পারেন। সব সময় যা চলে তার দিকে না গিয়ে, রিস্ক নিয়ে ভাল কিছু তৈরির দিকে মনোযোগি হতে হবে, দর্শক পাওয়া যাবেই।
যাইহোক, আর তাই আমাদের টিবি পরিচালকদের একটু এই বিষয়গুলা গভীর ভাবে বুঝা উচিত। তারা কি দর্শক ধরে রাখতে চান? না, শুধু এড প্রচার করতে চান। দর্শক ধরে রাখতে গেলে মাল্টি থেকে বের হয়ে সিঙ্গেল প্রোগ্রাম নিয়ে চ্যানেল পরিচালনা করতে হবে এবং সময়ানুবর্তীতার ব্যপারে কঠোর হতে হবে।
আর তা হলেই বাংলা চ্যানেলগুলোও বাঁচবে, বাংলাদেশে সংস্কৃতিও বাঁচবে। সেই সাথে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশের অগনিত সংসার গুলো।