আওয়ামী সমর্থকের চোখ

Posted In:Bangladesh, Politics, Social | Posted by: | Posted On:Aug 05, 2018 Comments Off on আওয়ামী সমর্থকের চোখ

মোল্লারা যেমন সব কিছুতে ইহুদি-নাসারার ষড়যন্ত্র দেখে,
পশ্চিমারা যেমন সব কিছুতে সন্ত্রাসী আক্রমণ খুঁজে,
বামরা যেমন সব কিছুকেই পুজিবাদের সমস্যা ভাবে,
আওয়ামীলী সমর্থকরা তেমনই সবকিছুতেই বিএনপি-জামাতের ইন্ধন দেখে।

এদের মনে আছে নিশ্চয়ই, ভিসির বাড়িতে আগুন দেওয়ার পরও এরা বিএনপি-জামাত দেখতে পাইছিল, তাইতো ভিডিও ফুটেজ থাকার পরেও এখনও পর্যন্ত এই কারনে কোনো বিএনপি-জামাত গ্রেপ্তার করতে পারে নাই। সমর্থকগুষ্টির এই অন্ধ বিশ্বাস নিশ্চয়ই মূল নেতাদের সারাক্ষণ হাসায়। আর এই হাসি হাসি মুখই কাল হইলো নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খানের জন্য, জায়গা মতো হাসি আটকাইয়া রাখতে পারে নাই।

যাইহোক, কথা হচ্ছে এই যে “নিরাপদ সড়ক চাই’য়ের দাবিতে ছাত্রছাত্রিদের এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন এটা কি স্রেফ নিরাপদ সড়কের জন্যই? এর আগে কি আর কখনও স্টুডেন্ট নিহত হয় নাই এইভাবে? মিরসারাই একসাথে ৪৫টা ছাত্র মারা যাওয়ার পর কেউ কি সরকারকে দোষারূপ করছিল? আন্দোলনে নামছিল? তাহলে এখন কেনো? কারণ গত নয় বছরে সরকারের অনেক ভাল কাজের সাথে অপকর্মেরও যে শেষ নাই, এই বাচ্চারা কিন্তু এইসব দেইখাই বড় হইছে। আমাদের স্কুল লাইফে খুব কম ছেলেমেয়েরাই পত্রিকা পড়তো, টিভিতে নিউজ দেখতো (বিটিভি ছাড়া আর কিছু ছিলও না), পত্রিকা আর রেডিও-টিভির নিউজ ছাড়া দেশের সংবাদ জানার আর কোনো মাধ্যমও ছিলা না কিন্তু এই সময় ২০১০ এর পরে বড় হওয়া ছেলেপেয়েরা ওরাও হয়তো পত্রিকা পরে না, টিভিতে নিউজ দেখে না কিন্তু ওরা সাবই ফেসকুব ব্যবহার করে, অন্যান্য সোশ্যাল নেটওর্য়াক ব্যবহার করে, এখন না চাইলেও তাদের কাছে দেশের গুরুত্বপূর্ন সংবাদগুলো চলে আসে, ভিবিন্ন ভাবে ভাইরাল বা ট্রল তৈরি হওয়ার কারনে। এরা সোশাল মিডিয়াতে আই হেইট পলিটিক্স” লিখে রাখা প্রজন্ম কিন্তু এই সোশাল মিডিয়ার এলগারিদমই এদের “পলিটিক্স” সচেতন করে গড়ে তুলছে। বিআরটিসি বাসে রাজিবের ঝুলন্ত হাতের ছবি এরা ফেসবুকেই দেখছে, দেখছে কিভাবে অভিমান করে রাজিব এই পৃথিবী থেকে চলে গেছে কিন্তু দোষীদের বিচার আর হলো না। নর্থসাউথের ছাত্র পায়েল কে কী নির্মম ভাবে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হইছিল তাও কিন্তু তাদের অজানা থাকে নি। সোনা হয়ে যায় লোহা, ব্যাংক হয়ে যায় লোট, কয়লা যায় উইড়া, বদি যায় ভাইগা। আমাদের ছোট বেলায় হলে হয়তো আমরা এইসব খবর জানতামই না। কিন্তু এখন ৫ বছরের বাচ্চাও জানে সোনা কিভাবে লোহা হইছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভচুরির ঘটনা উন্মোচিত হওয়ার পরপরই ফিলিপিনে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে সরাসরি লাইভ সম্প্রচারের মধ্যদিয়ে এক মাসের মধ্যেই বিচার কাজ শেষ করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলো আর আমরা আজও তদন্ত কমিটির রির্পোটটাই জানতে পারলাম না। আপনাদের কি ধারণা এইসব বাচ্চারা জানে না বা বুঝে না? বাসের রেষারেষি ফলে দুইটা ( কেউ বলছে ৭ জন) ছাত্র মারা গেল, এর কয়েকদিন আগে পায়েলের হত্যার ঘটনা সংবাদে আসলো, আর এইসব বিষয় নিয়ে যখন নৌ মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলো উনি হেসে উড়াই দিলেন আবার উপদেশ দিলেন পাশের দেশে ৩৩ জন মারা গেছে ওরা তো হইচই করে না, আমরা কেনো ২ জনেই অস্থির হয়ে গেছি! মুলত: মন্ত্রীর এইধরনের উপহাসই ছাত্রদের দীর্ঘ দিনের জমে থাকা ক্ষোবে আগুন ধরিয়ে দেয়ে। তারা দেশ নিয়ে চরম হতাশায় ছিল। গত বছরই কেবল ৮০ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী দেশ ছেড়ে বিদেশে পারি জমিয়েছে এবং এই সংখ্যা গুণোত্তর ধারায় বাড়তে ছিল। এরা রাজনৈতিক ভাবে সচেতন ছিল, দেশের খবর রাখতো কিন্তু দেশ পরিবর্তনের কথা ভবতো না, কারণ তারা মনে করতো “দেশ যায় যাক রসাতলে আমি যাবো পালিয়ে” কিন্তু আপনি এদের নিয়ে উপহাস করলেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে থাকা খাওয়ার খোটা দিলেন। শুধু আপনার অবদানের কথা বলে বলে তাদের অপমান করতেন। কিন্তু আপনার এই কথা বলতে পারার অবদানটা যে করা তৈরি করে দিছে এইটা আপনি কখনও মনে করতে চাইতেন না।সরকারেই এই কর্তৃত্ববাদী মনোভাই মূলত এদের রাস্তায় নামতে এবং এখনও অবস্থান নিয়ে থাকতে বাধ্য করেছে। বঙ্গবন্ধু ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থায় একটা চরম আঘাত হানতে চেয়েছিলেন তিনি পারেন নাই, কিন্তু এই ছাত্ররা সেই অঘাতটাই নিয়ে এসেছে, যে সময়ে এসেছে দুঃখজনক হলেও সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুর গড়া আওয়ামীলীগ সরকারই ক্ষমতায়। তাই আঘাতটা আওয়ামীলীগের ঘারেই পরতেছে। “পুলিশ কোন চ্যাটের বাল” স্লোগানে মূলত সরকারকেই আঘাত করছে। “পুলিশ কোন” পুলিশ কে, আমরা পুলিশ কে কেয়ার করি না, আমাদের এই প্রতিবাদ রাষ্ট্রপরিচালকের বিরুদ্ধে। এরা রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিয়ে মূলত রাষ্ট্রপরিচালকেই দেখাতে চেয়েছে রাষ্ট্র কিভাবে চালাতে হয়। ভালো করার মিথ্যা অভিনয় না করে চাইলেই কিভাবে আইনের শাসণ প্রতিষ্ঠা করা যায় তা তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ওরা সরকার পতনের আন্দোলনে নামে নি, ওদের মধ্যে কোনো নেতা নেই, কোনো সাংঘটনিক শক্তিও নেই, পিপিলিকা যেমন কোনো এক রহস্যজনক শক্তির দ্বারা সুসংঘটিত হয়ে কাজ করতে পারে, এই বাচ্চা ছেলেমেয়েদের মধ্যেও সেই রকমই একটা শক্তি আছে, যার জন্য তাদের কোনো সংঘটনের প্রয়োজন পরে নাই, নেতার প্রয়োজন পরে নাই কিন্তু ঠিকই তারা শৃঙ্খলা বজায় রেখে তাদের দাবির জন্য লড়ে যাচ্ছে। একটা নিয়ম নীতি মানা নতুন বাংলাদেশের জন্মদিতে যাচ্ছে যে আন্দোলন, যে শক্তি এবং স্পিরিট তা নিশ্চয় একসময় সমাজ এবং রাষ্ট গবেষক দের নতুন একটা ভাবনার খোরাক হবে। আর আপনারা, আপনাদের মতো র্নিলজ্ব আওয়ামীরা আসছেন এখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুজতে, একটা কর্তৃত্ববাদী সরকারের গোলাম হয়ে থাকাটাই আপনাদের কাছে অনেক সুখকর বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
এখনও সময় আছে এই গোলামি মানুষিকতা ছাড়েন, নিজের অধিকার সর্ম্পকে সচেতন হোন। আপনি যেই দলের সমর্থক সেই দলেকে আপনার কথা শুনতে বাধ্য করুণ, আপনি নিশ্চয়ই চান না দেশটা এভাবে ধ্বংশ হয়ে যান। আর আপনি যদি আপনার কথা দলকে শুনাতে না পরেন তার পরেও যদি আপনি সেই দলের সমর্থন করে যান তাহলে বুঝবেন আপনি শুধু একজন সমর্থক না আপনি একজন গোলাম, একটা দলের গোলাম। এই রাষ্ট্রেও আপনি একজন সিটিজেন না, আপনি একজন স্লেভ। অতএব, গোলাম হয়ে থাকতে না চাইলে, নাগড়িক হোন, আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামাত হেইট করে থাকলে, এদের বিকল্প সৃষ্টি করুন। তাও এদের গোলামী করে এদের কথায় বিশ্বাস করে এই দেশটা ধ্বংশে নিজেকে শরিক করবে না।

Comments are closed.