“স্যার” সম্বোধন

Posted In:Bangladesh, Politics, Social | Posted by: | Posted On:Aug 03, 2018 Comments Off on “স্যার” সম্বোধন

আজকে যে বিষয়টা খুব খারাপ লাগলো তা হলো, যে ছেলেমেয়েরা প্রশ্ন তুলেছিল “পুলিশ কোন চ্যাটের” তাদের অনেককেই দেখলাম পুলিশের সাথে কথা বলার সময় পুলিশ অফিসারদের “স্যার” বলে করছিল আর পুলিশ অফিসাররা তাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে শাসাচ্ছিল (যদিও অনেক সংযতই ভাবেই)। পুলিশের এই শাসানো নিয়ে আমার কোনো কথা না। আমি শুধু দেখতেছিলাম আর ভাবতেছিলাম এইখানে কে কাকে “স্যার” বলার কথা ছিল! আমার এই ভাবনাটা কিন্তু এই জন্য না যে আজকে বাচ্চারা বিরাট কান্ড ঘটাই ফেলছে এই জন্য পুলিস তাদের স্যার ডাকবে। ভাবনাটাছিল এইজন্য যে, যখন একজন মালিক আর তার একজন সেবকের মধ্যে কথা বলার সময় যদি কখনও “স্যার” শব্দটা ব্যবহারের প্রয়োজন পরে তাহলে কে আসলে এই শব্দের ব্যবহার করবে? মালিক না সেবক?
বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে এই রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছে এর “জনগণ”। জনগণ – যে কিনা রাষ্ট্রের বা প্রজাতন্ত্রের কোনো কাজে বেতন ভুক্ত ভাবে নিয়োজিত থাকে না। অন্যদিকে, “সিভিল সার্ভিস” এর অধীনে কর্মরত সকলেই এই জনগণের সেবক।তাই দুই পক্ষের মধ্যে কেউ যদি কাওকে স্যার বলে সম্বোধন করতে হয় তাহলে সিভিল সার্ভেন্ট বা জনগণের সেবকের উচিত তার মালিক কে স্যার বলে সম্বোধন করা। বাংলাদেশ বাদে অন্য যেসব দেশে সমাজতান্ত্রিক বা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিদ্যমান সেই সব দেশের কোথাও সিভিলিয়ানকে সরকারি অফিসারদের স্যার বলে ডাকতে হয় না । আর যেসব দেশে রাজতন্ত্র বিদ্যমান। যেখানে একজন রাজা থাকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে, তার পরের মর্যাদার আসনে থাকে রাজকার্যে নিয়োজিত ভিবিন্ন স্তরের কর্মীবাহিনীরা তার পরে অবস্থান থাকে রাজ্যের প্রজাদের। সেইখানে প্রজারা রাজর্কমীদের হুজুর হুজুর করতেই পারে। আমরা যেহেতু দীর্ঘ কাল ব্রিটিশ রাজ্যের অধীনে ছিলাম, যেহেতু সেই সময়ের আইসিএস অফিসারা ছিল মূলত ব্রিটিশ রাজের কর্মচারী তাদের র‍্যাংকও ছিল রাজ্যের প্রজা বা জনগণের উপরে। সেই সময় একজন আইসিএস অফিসার কে তার পদমর্যাদাক্রমানুসারে স্যার বলে সম্বোধন করা যেতেই পারে। কিন্তু যেইখানে জনগণকে মালিকের মর্যাদা দেওয়া হইছে সেইখানে এখনও কেনো জনগণ ব্রিটিশ শাসিতের ল্যাগেসি বহন করে “সিভিল সার্ভিসের” কর্মীদের স্যার বলে সম্বোধন করবে? এইখানে উচিত হইলো সরকারী চাকরিতে কর্মরত সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের তার মালিক জনগণকে স্যার বলে সম্বোধন করা্।পৃথিবীর সকল সভ্য দেশ গুলতে এই নিয়ম চললেও কিন্তু জানি না কেনো যেন এখনও অনেক উচ্চশিক্ষত মানুষজনও প্রজাতন্ত্রের এই কর্মচারীদের স্যার স্যার বলে ডেকে এদের দাপট আরও দশগুন বাড়িয়ে দেয়ে, এই স্যার শুনতে শুনতে এরাও একসময় ভুলে যায় তাদের অবস্থানটা আসলে কোথায় এবং তার মালিক জনগণের সাথে তার কেমন আচরন করা উচিত।

যাইহোক সংক্ষেপে শুধু এইটুকু বলবো, একজন পুলিশ অফিসার, সাব-ইন্সেস্পেক্টর থেকে শুরু করে ইন্সেস্পেক্টর জেনারেল, মেজিস্ট্রেট কিংবা ইউএনও থেকে শুরু করে সেক্রেটারি কাউকেই “স্যার” ডাকার প্রয়োজন নাই, যদি না সে কোনোভাবে আপনার শিক্ষক হয়ে থাকে। তাকে নামের আগে মিস্টার অথবা জনাব লাগিয়ে সরাসরি তার নাম ধরে ডাকেন অথবা নাম নিতে না চাইলে “অফিসার” অথবা “মি. অফিসার” ডাকতে পারেন।একজন মন্ত্রীও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী তাকেও স্যার বলার প্রয়োজন নাই।প্রধানমন্ত্রী আর রাষ্ট্রপ্রতির অবস্থানটা নিয়া এখনও অনেক বির্তক আছে। তারা কি সিভিল সার্ভেন্ট ওর নট।কিন্তু অন্যদের নিয়া কোনো বির্তক নাই।আর একজন মালিকে মালিকের মতই আচরন করা উচিত, আর তা না হলে ধীরে ধীরে সেবকই তার মালিকের উপর খবরদারি করা শুরু করে।

Comments are closed.