প্রস্তর যুগের গার্মেন্টস ও চা শিল্পের শ্রমিকেরা এবং আমাদের রক্তচুষা শিল্প মালিকেরা।

Posted In:Philosophy, Politics, Social | Posted by: | Posted On:Apr 24, 2012 Comments Off on প্রস্তর যুগের গার্মেন্টস ও চা শিল্পের শ্রমিকেরা এবং আমাদের রক্তচুষা শিল্প মালিকেরা।

ইসলামের আইন চালু হলে দেশ মধ্যযুগে চলে যাবে, এই কারনে বুদ্ধিজীবি আর মানবাধীকার কর্মীদের এই কয়দিন ঘুম হারাম ছিল । যে করেই হোক দেশ কে মধ্যেযুগে নিয়া যাওয়া চলবে না। সেই করানে নারী শ্রমীকদের দিয়ে মধ্যযুগ বিরোধী সমাবেশের অয়োজন করানো উদ্বোগ নেওয়া হয়েছিল এবং সেই আয়োজনে বিজিএমইয়ে প্রান খুলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। — হুম.. এই পর্যন্তু আমার কোনো অভিযোগ নেই, ব্যবসা ও লাভ ছাড়া একটা কজে যে এরা এগিয়ে এসেছে তাই অনেক বড় প্রাপ্য ।

কিন্তু মধ্যযুগ বিরোধী অন্দোলনে নামলেও এরা (গার্মেন্টস মালিক) যে শ্রমিকদের ‘প্রস্তর’ যুগে ফেলে রেখেছেন এই বিষয়টা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো বুদ্ধিজীবি অথবা কোনো মানবাধীকার সংস্থাকে জোড়ালো কন্ঠে কথা বলতে শুনিনি। প্রস্তর যুগ হুম পাথর আর আগুনের যুগ। হয় পাথরে চাপা পরে জীবনের শেষ সীকৃতি না হয় আগুনে পুড়ে। এর বাহিরে এরা কখনও বেড় হতে পারে না । কিন্তু এদের কাধের উপর ভর করে অনেকেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে অঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হোন।

বছরে ৩-৪ বার যখন শ্রমিকরা তাদের শেষ সীকৃতিটা ( মৃত্যু) পান তখন হয়তো ২-১ দিন তাদের নিয়ে, তাদের অধিকার নিয়ে কিছু আলোচনার ঝড় উঠে। হয়তো সেই সীকৃতির সাথে তাদের পরিবার কিছু প্রাপ্তি ঘটে, প্রতি জীবনের বিনীময়ে বিশ হাজার থেকে এক লাখ টাকা । ঐ এই পর্যন্তই তাদের জীবনের সর্বচ্চ মূল্য। তার পর তাদের কথা সবাই ভুলে যাই কিন্তু একথা ভুলি না বলতে দেশের ৮০% আয় আসে গার্মেন্টস থেকে তাই ভুলি না গার্মেন্টস মালিকদের সম্মান জনাতে । ভুলে যাই শুধু এর পেছনের সত্যিকার কারিগড়দের।

কিছুদিন আগে বোস্টনে বোমা হামলাম মাত্র ৩ জন মারা গেল। তাতেই তাদর নিয়ে সাপ্তাহ ধরে হাউকাউ এখনও থামে না। তারা হয়তো খুচিয়ে যেকরেই হোক ইসলামের গন্ধটি বার করে তার পর অপরাধীকেও সাজা দিতে পারে । কিন্তু আমরা ?? কয়েক’শ মৃত্যুর পরে হয়তো ১-২ দিন শোক দিবস পালন করি, তদন্ত কমিটি তৈরি করি, যারা রিপোর্ট কখনও আসে না। অপরাধী কখনও শনাক্তই হয় না ধরা পড়া আর শাস্তি পাওয়াতো দূরের কথা। তার উপর অপরাধীরা যখন সমাজের উচ্চশ্রেনীর মানুষ যাদের কূটবুদ্ধির উপর দেশের অর্থনীতি নির্ভর তারা যতবড় অপরাধ করুক না কেন, হাজার কোটি টাকার অপরাধ হলে তাদের আরও হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে। শত শ্রমিককে হত্যা করলে হয়তো আরও শত শ্রমিক তাদের দেওয়া হবে- এটাই তাদের শাস্তি। এসব নিয়ে কখনও কোনো সমাজ কথা বলবে না।

আজ যে খানে সারা দেশ মর্মাহত, শোকাহত । সবাই যখন দোয়া করছে একটি জীবিত প্রান থাকলেও যেন তাকে সঠিক ভাবে উদ্ধার করা যায় সুস্থ করে তুলা যায় । তখন সেই রক্তচোষা গার্মেন্টস ওনাররা ভাবছে তাদের কি পরিমান ক্ষতি হলো !! বায়ারদের কাছে তাদের ভাবমূর্তি কতোটা ক্ষুন্য হলো !! এর প্রভবা কি তাদের উপর এসে পড়ে কিনা আবার!! এই সব কিছু কিনা তাদের রক্তচোষা প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়ায় !! শ্রমিকের ঘাড়ের উপর দ্বারিয়ে নিজের বিলাসী জীবন গড়ে তুলার নিকৃষ্ট বাসনা নাকি ক্ষতিগ্রস্থ হয়!!

আজ প্রস্তর যুগে শুধু আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিকরাই বাস করাছে না । আরও একটি শ্রমগুষ্টি আছে যাদের নিয়ে কখনও আলোচনা হয় না । যাদের কোনো সংঘটন নেই । যাদের কে আমরা কখনো আমাদের সমাজের সাথেও যুক্ত করি না । কিন্তু প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তাদের রক্ত পাণ না করলে আমাদের দিনটাই শুরু হয় না। হুম আমি চা শিল্পের সাথে যুক্ত শ্রমিকদের কথা বলছি। যাদের কে “কুলি” বলে ডাকা হয়। তারা কোন যুগে বাস করছে, কেউকি বলতে পারবেন ? নাহ, এসব নিয়ে চিন্তা করার সময় আমাদের নেই, কিছু মানুষকে আমরা সবসময় অদ্ধকারে রাখতেই ভাল বাসি। তারা হয়তো গার্মেন্টস শ্রমিকদের মতো গনহরে প্রান উতর্সগ করতে পারে না, তাই তারা কখনও মিডিয়া কাভারেজও পায় না । কিন্তু তাদের নিয়ে রাজনীতি করার সময় কেউ কাউকে ছাড় দেন না। নারী অধিকার নিয়ে সরাদেমে তুলকালাম হয়ে গেলেও, চা শিল্পের শ্রমিকদের যে নৌনতম মানব অধিকার টুকুও পায় না সেই দিকে কারও নজর নেই, নজর পড়বেও না । তাহলে যে শ্রমিকের রক্তপাণ দিয়ে দিনটা আমরা শুরু করা হবে না।

Comments are closed.