১০ টি তাজা প্রানের বিনাষ ও আমাদের দ্বায়বদ্ধতা

Posted In:City Life, Politics | Posted by: | Posted On:Jun 14, 2014 Comments Off on ১০ টি তাজা প্রানের বিনাষ ও আমাদের দ্বায়বদ্ধতা

ইচ্ছা ছিল গতকালকেই ঘটনাটা নিয়া কিছু একটা লিখি। কিন্তু সময়ের অভাবে তা আর করতে পারলাম না। তাই বলে ঘটনার প্রভাব আর থেমে থাকে নি। সকালে উঠে যা দেখলাম তা পুরোপুরিবিধ্বংসী বিস্ফোরণ। কল্পনাও করিনি এমন কিছু ঘটবে যা নিয়ে আমি কয়েকদিন ধরেন উদ্বিগ্ন।
যাইহোক ঘটনায় আসি। কয়েক দিন আগের কথা। মিরপুর-১০ থেকে লোকাল বাসে উঠছি, গন্তব্য হাইকোর্ট। বাসে উঠে জায়গা না পেয়ে একদম পেছনের ছিটের মাঝখানটায় বসলাম। কিছুক্ষন দুইটা ইয়াং ছেলে বাসে উঠে আমার ডান পাশের ফাকা জায়গাগুলাতে বসলো। তাদের একজনকে দেখে কলেজ পড়ুয়া মনে হলো আরেকজন সম্ভবত আমর থেকে বড় হবে। ছিটে বসেই তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ করা শুরু বলা শুরু করলো। এর মধ্যে বাস ছেড়ে দিয়েছে। আমি যেহেতু ওদের বাসেই বসা তাই শুনতে না চাইলে কানের মধ্যে ওদের কথা বার্ত চলে আসছিল, কথাবর্তা শুনু যতটুকু বুঝতেলাগাম তারা দুইজনেই ব্যবসায়ী। হয়তো কোথাও দোকান-টোকান আছে। তাদের মধ্যে কলেজ পড়ুয়া বয়সী ছেলেটা অপরজনকে বলতে লাগলো–

:এখন এই ব্যবসাটা খুব ভালই যাচ্ছে। সামনে সবে বরাত, এরপর রোজা, ঈদ এরমধ্যে বিশ্বকাপ খেলা, এখনই সেল কইরা পার পাইতাছিনা। পরশুদিনও (গত) গুলিস্থান যাইতে হইছে মাল আনার জন্য। আজকে আবার যাইতাছি।
: মাল কত কইরা কিন্না আনস।
: এইতো ৩০ ট্যাকা কইরা প্যাকেট এক প্যাকেটে ২৮টা থাকে। এক সাথে অনেক গুরা নিয়া আসি। এইখানে আইন্না একটা ৫ ট্যাকা কইরা বেচি। তার পরেও পুলাপাইনে দিয়া কুল পাই না। খেলার সময় তো প্রতি গোল হইলেই ফোটানোর দরকার পরে। ……

এই পর্যন্ত শুনে বুঝতে পারলাম আসলে এদের ব্যবসাটা কি। আমিও বাসে বসে বসে একটু চিন্তা করে দেখলাম। সিজনাল ব্যবসা হিসেবে এটাতো দারুন। সবে মেহ্‌রাজের আগ থেকে আমার এলাকায় যেভাবে আতশ-বাঁজি বা বোমা ফোটানো হচ্ছে তাতে তো আসলেই ব্যবসাটার কদর আছে বুঝা যাচ্ছে। আর দীর্ঘদুই মাস ধরে এই চাহিদা চলতে থাকবে, এতে লাভও অনেক প্রায় ৪০০ পার্সেন্টের মতো। কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো। এই জিনিসটা কতটা বিরক্তকর ও ভয়ঙ্কর। আমর মতো ইয়াং যুবকেই হঠাৎ করে চরম মাত্রায় চমকিয়ে দেয়ে, অনেক সময় মূহূর্তেই হার্টবিট বাড়িয়ে একে বাড়ে দম বের হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফেলে। এ নিয়ে আরও একটা মজার ঘটনা বলি সম্ভবত আজ থেকে দুই কি তিনদিন আগের ঘটনা।
সন্ধার পরে বাসায় ফিরে গোসল-টোসল করে হঠাত কি মনে করে জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়েছি। দেখলাম কিছু বখাটে ইয়াং ছেলেপেলে সামনের বিল্ডিংয়ের বসার মতো একটা দেয়ালের উপর বসা। এদের কে বখাটে বললা এইজন্য যে, এরা খুব হিরো হিরো ভাবসাব নিয়ে এইসব জায়গায় বসে থাকে আর প্রাইভেটে পড়তে যাওয়া মেয়েদের আসা-যাওয়া ফলো করে। তো যাইহোক কয়েক সেকেন্ড জানালঅ দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম এরই মধ্যে এর কাছাকাছি পাশের একটা অন্ধকার গলি থেকে ঢুম করে একটা শব্দ হয়ে ঠুস-ঠাস-ঠুস-ঠাস করে অনবরত সিরিজ কিছু বোমা ফুটলো। মজার বিষয়টা লক্ষ্য করলাম যে, যেই না এই শব্দ গুলা শুরু হইলো, সাথে সাথেই এই হিরো গুলা লাফ দিয়া বসার জায়গা থেকে উঠে সামনে দৌর দিলো। কিছু দূরে যেয়ে তারা অবাক হয়ে কি হলো তা বুঝার চেষ্টা করলো। আমাদের তাদের এই অবস্থা দেখে খুব হাসি পেলো। মনে মনে বলি “হিরো এই জান নিয়া তোমরা এত ভাব দেখাইয়া এই খানে বইসা থাকো” আসলে তাদের এত ভয় পাওয়ার আরও একটা কারন ছিল। শুধু বোমা ফুটলে হয়তো তারা এতটা ভয় পেতো না। এই গলিতে কয়েকবার বন্দুক নিয়ে গোলাগোলি হয়েছে আর যেহেতু এই বোমাগোলা সিরিজ আকারে একটার পর একটা ফুটতে ছিল কিছুটা কম ওয়াজে তাই গোলাগোলির মতো শব্দ হয়েছিল। তাই এরা একপ্রকাল লাফিয়ে পরে এখাথেকে সরার চেষ্টা করছিল।

যাইহোক এটা একটা মজার ঘটনা হলেও একবার ভাবুনতো এই ইহয়াং ছেলে পেলেরাই যদি এতো মাত্রায় ভয় পেয়ে থাকে তাহলে বৃদ্ধ বা অসুস্থা রোগী বিশেষ করে হাপানী ও হার্টের রোগীদের কি অবস্থা হতে পারে। আমাদের মতো সাধারন মানুষের বিরক্তের কথা না হয় বাদই দিলাম।

আমারও ছোট বেলায় এইসব আতস-বাঁজি আর বোমা যাই বলেন না কেনো তা ফুটিয়েছি। আমাদের সময় আট-আনা করে কাগজে মোড়ানো কিছু বোমা পাওয়া যাতো আমরা এইগুলারে আটানিবোম বলতাম, আর ১টা ও ২দুটাকা করেও কিছু বোমা পাওয়া যেতো, যেই গুলা কেনার কখনও সামর্থ হয় নাই। আমরা বন্ধরা দুইটাকা তিন পাঁটাকা করে দিয়ে খুব দামি বোমা কেনার মতো অবস্থায় পৌছাতে পারতাম না । এই আটানি বোমগুলা তখন যে মাত্রায় শব্দ করতো এখনকার পাঁটাকার বোমগুলো সেই আওয়াজ এখন আর দেয়ে না। এজন্য হয়তো ছেলেরা এখন সিরিজ আকারে অনেকগুলাকে এক সাথে ফুটিয়ে থাকে বেশি চমক দেখানোর জন্য। কিন্তু এই বাচ্চা ছেলেরা এতো টাকা তারা পায় কোথায়। আমাদের সময় ৫-১০ বোমা কিনে ঈদের আগে পরে দুই তিনদিন ফুটালেই হয়ে যেতো কিন্তু এখন এই ঢাকাতে সিরিজ আকারে প্রতি মিনিটে।

৫ বছর আগেও যখন ঢাকায় আসি এই অবস্থা ছিল না। ঈদ বা রোজাতে খুব একটা বোমা বাজি শোনা যেতো না। একটা কথা বলতে হয়তো অনেকেই বিরক্ত হবেন। তবে সত্য এই যে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে সমাজে এই ধরনের উৎপাত খুব বেড়ে যায়। ৯৬ থেকে ২০০১-ও যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও পত্রিকা খুললেই ঢাকা শহরের ছিন্তাই আর খুন-খরাবির নিউজ পাওয়া যেতে। মেট্রিক-ইন্টার পরিক্ষার সেন্টার পর্যন্ত পৌছতে পারলেই নকল করে ফাস্ট ডিভিশন পাওয়া যেতে। বর্তমান ২০০৮ থেকে আওয়ামী সরকার গত আমল থেকে আরও কয়েক ডিগ্রী উপরে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ছিন্তাই আর খুন থেকে ধর্ষন – গুম-ক্রসফায়ার, মেট্রিক-ইন্টারে পরীক্ষায় নকলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়না প্রশ্নই দিয়ে দেওয়া হয়। বোমা-বাঁজির সাথে এগুলো কেনো বলছি ? কারণ আমাদের ছোট বেলার বোমাবাজিঁর সাথেও আমওয়ামীলীগ সরকারের আমলের একটা প্রভাব আছে। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে এইসব সামজিক সমস্যারও পরিবর্তন হয়ে যায়। ২০০১ এ যখন বিএনপি ক্ষমতায় এসে ক্লিন হার্ট অপারেশন শুরু করলো, সত্যি বলতে কি তখন থেকে যেইসব দোকান থেকে বোমা গুলো কিনতাম সেখানে বোমার কথাবলে উলটো দোকানদারের কাছ থেকে বকা শুনতে হতে হয়েছে এমনও পরিস্থিতি গিয়েছে। তাই ক্লাস ৭-৮ থেকে আর সেই ভাবে বোমা ফুটাতে পারি নাই, কারণ বোমার এই দুষপ্রাপ্যতার করনে। তার পরে র‍্যাব সৃষ্টি হয়ে পরিস্থিতি আরও কঠোর হলো। ২০০৫ এ যখন জিএমবির মানুষ মারার বোমাবাজি শুরু হলো এবং এর পর সরকার যে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করলো এবং সেই কঠোরতা এতই কঠোর ছিলো যে সর্বত্র আতশবাজী ফোটানো নিষিদ্ধ ছিল এবং এই ধারা আর্মী ব্যাক্ড তত্ববধায়ক সরকার পর্যন্ত বহাল ছিল। এতে করে তখন সত্যি বলতে কি আমি সেই সময়টাতে কোথাও আর আতশবাঁজি ফুটাতে দেখিনি। দুই ঈদ বা রোজাতেও কোনো শব্দ শোনা যেতো না, ঈদের আগের রাত প্রায় পানসে ভাবে কটতো তখন মনে হতো। কিন্তু ২০০৮ থেকে সরকার পরিবর্তন করে যেই আওয়ামীলীগ আনলাম, সেই থেকে সামাজিক এইসব অবক্ষয় গুলি আবার ধীরে ধীরে শুরু হতে লাগলো। আগেও বলেছি ৫ বছর আগেও যখন ঢাকায় আসি তখন ঢাকার আজকের এই অবস্থা ছিলনা। ঈদের আগের দিন হয়তো কয়েকটা আতশবাজির শব্দ শুনা যেতো।
কিন্তু গত তিন বছর ধরে মাত্রাটা ধীরে ধীরে বাড়তেই থকে। গতকালকের অবস্তা প্রায় চরম আকার ধারন করে আমার এলাকায় আমি বসে বসে হিসাব করছিলাম.. সন্ধার পর থেকে প্রতি ৫ মিনিটে ৩টা করে বোমা ফুটানো হয়েছে। তাও প্রায়ই সিরিজ আকারে একসাথে অনেক গুলো। তাহলে একটু হিসাব করুন একটা বোমা যদি ৫টাকা করে কিনি তাহলে প্রতি ঘন্টায় ১৮০ টাকার মতো একটা এলাকায় খারচ করা হচ্ছে। আর সারা ঢাকাতে কী পরিমান খরচ হচ্চে প্রতি ঘন্টায়। বুঝতে তো পারছেন ব্যবসাটা এখন চরম জমজমাট।

এখন এই জমজমাট ব্যবসার পেছনে কী আছে ?? কেনও আওয়ামীলীগ আসলেই এই অবক্ষয় শুরু হয়। করন ঐ একটাই ব্যবসা আর এর পেছনে .. হুম আওয়ামীলীগের একটা বন্ধপ্রতিম দেশ.. হ্যা .. তা হচ্ছে ভারত। বারমাসই মাদক ব্যবসার পাশাপাশি, সিজনাল আতশবাঁজি ব্যবসাটাও কম অ্যামউন্টের না। আমাদের দেশের বেশিরভাগ আতশবাঁজিই আসে ভারত থেকে, কিছু আসে চায়না থেকে। চায়না থেকে আসা গুলা স্পেশাল ঐগুলা আওয়াজ করার জন্য নয় বরড় আকাশে রঙ্গের ছটা সৃষ্টির জন্যই বেশি ব্যবহিত হয়। কিন্তু ভাতীয় বোমা গুলার বেশিরভাগই শব্দ সৃষ্টি কারী। আর এর মার্কেটও এখানে বিস্তৃত। আর এজন্যই আওয়ামীলীগ ও আতশবাঁজি বা বোমা বাজি একটার সাথে আরেকটার সাথে আরেকটা সর্ম্পকযুক্ত এবং এজন্যই বোমাবাজির এতো প্রর্দুভাব।

যাইহোক, বলতে বলতে অনেক কিছুই বলে ফেলেছি। এখন শেষ করতে হবে। শুরুতে দুই ব্যবসায়ী বন্ধুর গল্প দিয়ে শুরু করেছিলাম। আর বলেছিলম আজ সাকলে উঠে দেখি পুরোপরি বিধ্বংসী বিস্ফোরণ। আসলে এই বিস্ফোরণটা হচ্ছে আজ মিরপুর কালশীর বিহারী কলোনীতে ঘটে যাওয়া সেই নির্মম ঘটনা। দুইজন ব্যবসায়ীর ছোট একটি ঘটনা, সমান্য কিছু লাভ কিন্তু এর ফলাফল কতো ভয়ঙ্কর তা আজকের শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দিলো। কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু হলে তার পরিনতি যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তার একটি নমুনা হয়ে থাকলো। শুধু শুধু বোমাবাজদের একক ভাবে দোষারূপ করলে চলবে না, আমারও হয়তো ছোটো বেলায় না বুঝে এমন কাজ করেছি, আমাদের কাছে যেহেতু এইসব অপদ্রব্য ছিল তা আমরা তা ধরন করেছি। তাই সমস্যা একপাশে থেকে না দেখে এর মূলে যেয়ে দেখতে হয়। আমি নিজেও এখন আমার ছোটবেলায় করা অপরাধটুকুর জন্য অনুতপ্ত। সেই দুই ব্যবসায়ীও কি তাদের দ্বায়বন্ধতাটা বুঝতে পারবে ? তার কী বুঝতে পারবে বিড়ি-সিগারেটের ব্যবসা যেমন সম্পূর্ন হারম এই বোমা-বাজি আর আতশ বাঁজির ব্যবসাটাও সম্পূর্ন হারম। বুঝতে পারবে কী আমাদের সরকার যারা ইম্পোর্টাদের এইসব অপদ্রব্য আমাদানী করার সুযোগ করে দিয়ে দেশের মানুষের সারাদিনের কষ্ট শেষে রাত্রির একটু শান্তির সময়টাকেও বিরক্তিকর করে তুলে। নাকি মানবিকতার বাহিরে যেয়ে ৭১-এর চেতনায় উদ্ভোদ্ধ হয়ে বিজয়ের উল্লাস করবে।
আমি মনে করি তাদের আজ এই ১০জন মানুষের মৃত্যুর দায় নিয়ে শুধু মাত্রা আতশবাঁজি ফোটানোর উপর নিষেধাজ্ঞা না রেখে এর আমাদানির উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।

Comments are closed.