শুধু ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখলেই হবে?। একজন ড্রাইভারের কর্মঘন্টা ও মুজুরির বিষয়টাও আমলে নেওয়া উচিত।
এই ঢাকা শহরে একজন বাস ড্রাইভার সকাল ৬টায় গাড়ি নিয়ে বের হয় আর রাত ১১ টায় গাড়ি জমা রাখতে যায়। একটানা প্রায় ১৬ ঘন্টা ডিউটি করে। আমি-আপনি ২ ঘন্টা জ্যামে বসে থাকতে পারি না, অস্থির হয়ে যাই, মটিভেশনাল স্পিকার সোলামান সুখনও মটিভেশন ধরে রাখতে পারে না তার তিনটা মিটিং ক্যানসেল হওয়াতে সেও পাগল হয়ে যায়। আর এই বাস ড্রাইভার গুলা সারাদিন জ্যামে পরে থেকে যাত্রির গালিগালাজ শুনতে শুনতে টানা ১৬ টা ঘন্টা টেম্পারমেন্ট ধরে রাখার চেষ্টা করে, আর এই জন্যই বেশির ভাগ ড্রাইভাররা এখন গাজা আর ইয়াবার ছায়া আশ্রয় নিচ্ছে। এতো কোলাহাল, এতো পে-পু, এতো ঝাক্কি-ঝামেলা এই মাদক গ্রহন তাদের কিছুটা নিস্তার দেয়ে। এর মধ্যে আছে লাইসেন্স না থাকায় পুলিশের মামলা আর চাঁদাবাজির ভয়, আছে ভারা ঠিকমত উঠাতে না পারলে মালিকের জমা পরিশোধ করে নিজের জন্য কিছু না থাকার টেনশন। ভাংগা রাস্তা আর ধুলাবালিতে ঢাকা পরিবেশের অসহনিয়তা। এতো কিছু মাথায় নিয়ে একজন বাস ড্রাইভারকে এই শহরে গাড়ি চালাতে হয়, ৪ কোটি মানুষের এই শহরে সারাদিন রাস্তাতেই থাকে অন্তত অর্ধকোটি মানুষ এইখানে পান থেকে চুন খসলেই থাকে দুর্ঘটনা ঘটার সুযোগ। একজন ঠিকমত ঘুম না হওয়া, ঠিকমত খেতে না পারা ড্রাইভারের জন্য এই দুর্গম পথ পারি দেওয়া কতটা চ্যালেঞ্জের তা কি আমরা কখনও অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি?
তাদের ৮ ঘন্টার জায়গায় ১৬ ঘন্টা ডি্উটি করায় কে? রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি করে রাখে কে? কোলাহল সৃষ্টি করে রাখে কে? চাঁদাবাজির ভয় দিয়ে তাড়িয়ে রাখে কে? লক্কর-ঝক্কর ত্রুটির্পূণ গাড়ি এদের হাতে তুলে দেয় কে? ভাংগা-চূড়া আর বেনিয়মি রাস্তা তৈরি করে রাখে কে? এই প্রশ্নগুলার উত্তর দেন এরপর বলেন সে যখন একটা ভুল করে তখন এই ভুলটা দায় কতটুকু আসলে তার? পৃথিবী সেরা ড্রাইভার নিয়ে এসেও যদি এই পরিবেশে গাড়ি চালাতে দেন এর থেকে কম দুর্ঘটনা ঘটিয়ে গাড়ি চালাতে পারবে বলে আমি মনে করি না। এইজন্য একজন ড্রাইভারের ফাঁসি বা শাস্তির দাবী যদি তুলতে হয় তাহলে সেই সাথে এই জঘন্য পরিবেশ সৃষ্টিকারিদেরও ফাঁসি আর শাস্তির দাবী তুলতে হবে। আর সেই দাবী তুলতে না পারলে শুধু ড্রাইভারদের শাস্তি দেওয়াটা কোনো ভাবেই কোনো ন্যায়সঙ্গত কাজ হতে পারে না। (আর দুঃখিত ফাঁসি চাওয়ার মতো আবেগি কোনো কালেই হইতে পারি নাই।)
এই জন্য ছাত্রদের ৯ দফা দাবীর সাথে ড্রাইভারদের কর্মঘন্টা, মুজুরি আর পরিবেশের বিষয়টা যুক্ত করতে হবে।
*** দৈনিক ৮ ঘন্টার উপরে কোনো ক্রমেই ড্রাইভ করানো নয়। ঢাকা শহরের অবস্থা বিবেচনায় টানা ৪ ঘন্টা ড্রাইভ করার পর ১ ঘন্টা বিরতি থাকতে হবে।
একজন ড্রাইভারের নূনতম মাসিক আয় ৩০ হাজার নিশ্চিত করতে হবে, এর নিচে আয় দিয়ে এই শহরে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না। একজন ড্রাইভার নিচেই যদি স্বাভাবিক ভাবে বাচঁতে না পারে তাহলে সে কিভাবে আপনার বাঁচার কথা চিন্তা করতে পারে??
*** পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
*** সকল ধরনের ভি.এই.পি পাস বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি যেই হোক। সরকারের তথ্য প্রযুক্তি উপদেশটাতো বলেছেনই, ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকে সে ইউএসের স্পিড পায়। তো সেই স্পীড দিয়া ভিডিও কনফারেন্স করে করে উনার অফিস করার অভ্যাস গড়ে তুলুক। ভি.এই.পি জ্যাম সৃষ্টি করে যাত্র আর ড্রাইভারের মেজাজ বিগ্রায় দিয়ে পরিবেশকে আরও দুর্ঘটনা প্রবণ করা হয়।