১ অগাস্ট ২০১৮ – “নিরাপদ সরক চাই” আন্দোলন

Posted In:Bangladesh, Education | Posted by: | Posted On:Aug 03, 2018 Comments Off on ১ অগাস্ট ২০১৮ – “নিরাপদ সরক চাই” আন্দোলন

আজকে সকালবেলা অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়ে দেখি রাস্তায় কোথাও কোনো বাস নাই, কিছু প্রাইভেট কার আর রিক্সা চলছিল। কিছুক্ষন এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে গেলাম মিরপুর ৬০ ফিটে। অনেকক্ষন রোদের মধ্যে দাড়ানোর পর র্ফামগেট গামী লেগুনার দেখা পেলাম কিন্তু যাত্রিতে লেগুনা পুরা ভরা। কোনো রকমে লেগুনায় উঠার পা-দানিতে এক পা রেখে এক হাতে হেন্ডেল ধরে ঝুলে ঝুরে মিরপুর থেকে র্ফামগেট আসলাম। এইখানেও একই অবস্থা, রাস্তায় কোনো বাস নাই, ঢাকা কলেজের ছেলেরা রাস্তায় গাড়ির লাইসেন্স চেক করতিছিল। সবাই পায়ে হেঁটেই যে যার গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিল, কারও চেহারায় কোনো ক্লান্তির ছাপ নাই। যাইহোক র্ফামগেট থেকে হেটে বাংলামটর পর্যন্ত গেলাম। বাংলামটর থেকে আরও কিছু দূর হেঁটে রিকক্সা নিয়ে এলিফেন্ট রোডের মাঠায় পৌছাতেই দেখলাম সিটি কলেজের ছাত্ররা মোড়ে দাড়িয়ে সবাবেশ করছে, সাবাইকে রিকক্সা থেকে নামিয়ে দিচ্ছে, শুধু জরুরি গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে যেতে দিচ্ছিল।তো এইখানে নেমে সামনে যেয়ে আবার রিকক্সা নিয়ে অফিসে পৌছলাম। অফিস থেকে ফেরার সময় রাত প্রায় সারে আট টা বাজে। ছাত্ররা এর মধ্যে আজকের মত আন্দোলন স্থগিত করেছে কিন্তু রাস্তায় খুব একটা গাড়ি নাই। অনেক্ষন পর পর একটা বাস আসলেও বাসের গেটে ঝুলার মতোও জায়গা খালি নাই। অধা ঘন্টা দাড়ানোর পর একটা বাসের হেন্ডেল কোনো ভাবে ধরে আবারও ঝুলে ঝুলে মিরপুর আসলাম।

এতো লম্বা করে এই যাত্রার বর্ননা করার কারন হলো, আজকে এতো ভোগান্তির পারেও এক বিন্দু মাত্র কষ্ট অনুভুত হয় নাই। সারাটা সময় একটা ঈদ ঈদ ভাব কাজ করছে। যদিও রাস্তার মধ্যে কিছু কষ্টদায়ক বিষয় দেখছি, এটা নিয়ে পরের পোষ্টে বলব কিন্তু এইযে সারাদিন এতো ভালোলাগা এর মূলে কিন্তু আওয়ামী সরকারের দূর্বলতা দেখতে পাওয়া না, এই ভালোলাগাটা মূলত ছাত্রদের মধ্যেদিয়ে সাধারন মানুষের হাতে ক্ষমতায়নটা দেখতে পারা। ছাত্ররা যখন রাস্তায় দাড়িয়ে গাড়ির কাগজ পরীক্ষা করতেছিল তখন পাশে দাড়ানো পুলিশকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। যেইকাজগুরো পুলিশের করার কথাছিল, সেইকাজ গুলো পুলিশ করতে পারে নাই, সেই কাজগুলোই ছাত্ররা করতেছিল এবং তারা তা করে দেখাইছে। এইযে সত্যিকারের জনগনের হাতে ক্ষমতায়ন, যা এই স্কুল পড়ুয়া ছোটো ছোটো বাচ্চাদের দ্বারা হলো এই দৃশ্য দেখলে কার ভালো না লেগে থাকতে পারে। ক্ষমতার দাপটে যাদের সামনে নত হয়ে চলতে হতো, আজকে তাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে এই বাচ্চারা দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে ক্ষমতার সুষ্ঠ ব্যবহার করতে হয়। এই দৃশ্যের জয় হোক। এই দৃশ্য ফিরে আসুক বার বার। মানুষ ফিরেপাক তার ক্ষমতা তার অধিকার।

সরক দুর্ঘটনায় দুই ছাত্রের মৃত্যুর কষ্টকে বুকে নিয়ে তার সহপাঠিরা সাহসের যে আন্দোলন শুরু করেছ তা সফলহোক। ইলিয়াস কাঞ্চন “নিরাপদ সরক চাই” স্লোগান সামনে নিয়ে নিরাপদ সরকের জন্য দাবীতে যে দফাগুলো তৈরি করেছিল তার একটা বাস্তবায়ন দেখতে চাই। এই কয়দিনে বাচ্চারা যা দেখাইলো আমি সত্যিই খুব আশাবাদি এদের নিয়ে, এরাই এই ভাংগা দেশকে সঠিক ভাবে গড়ে তুলে সত্যিকার সোনার বাংলাদেশ গড়বে।

জয় হোক নতুন প্রজন্মের। জয় হোক সাধারণ মানুষের।

Comments are closed.